যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে ভালবাসেন, এবং শুধু ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ নন, তাঁর সমগ্র সাহিত্য ও দর্শন যাঁরা আত্মস্থ করতে চান, তাদের জন্য কাশীনাথপুরে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথের উপর গবেষণা ও প্রণোদনাধর্মী বিশেষ প্রতিষ্ঠান রবীন্দ্র পাঠশালা। সবার সহযোগিতা নিয়ে কাশীনাথপুর, পাবনার স্কাইলার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, এই প্রতিষ্ঠান করতে যাচ্ছে। যদি আপনাদের কাছে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে দেবার মতো কোন সামান্য তথ্যও থাকে, দয়া করে প্রতিষ্ঠানটিকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসুন।
যোগাযোগ: রবীন্দ্র পাঠশালা, স্কাইলার্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কাশীনাথপুর, পাবনা।
e-mail: robindropathshala@gmail.com
কাশীনাথপুরে রবীন্দ্র পাঠশালা
নিবন্ধ
বাউল সম্রাট লালন শাহ : এক কালোত্তর প্রতিভা
আলাউল হোসেন
একদল মানুষ থাকেন, যাঁরা সবকালেই শাস্ত্রাচারের বাইরে মানব মুক্তি ও ঈশ্বরলাভের পথ খোঁজেন। তারা ধর্মকে নেন হৃদয়ে সহজ, সত্যের মত, জাতকূল সম্প্রদায় ইত্যাদিকে দূরে রেখে। বাউল কবি লালন শাহ্ ও সেই একদল মানুষের সকমকালের একজন।
লালন শাহের জন্ম নিয়ে, ধর্ম কিংবা জাত নিয়ে যে মত ভিন্নতা তা লালনকে পুরোপুরি রহস্যময় করে তুলেছে। তিনি শরা নাকি ধরা, আিস্তক না নািস্তক, মুসলমান কি হিন্দু এসব প্রশ্ন উত্থাপিত হলেও এর মীমাংসা সূত্র আবিষ্কার হয়নি। যখন তিনি নিজেই বলেন:
“সব লোকে কয়, লালন কি জাত সংসারে”...........
সব লোকের এ কৌতূহল তিনি মেটাননি। বরং মানুষের জাতহীনতার কথা বলেন:
“মানুষের কি হয় জাতের বিচার।”
মূলত, তত্ত্বের আড়ালে লালন যে দ্রোহের আগুন জ্বেলেছিলেন, তা তমসাচ্ছন্ন সমকালকে আলোকিত করে উত্তরকালকেও আলোকিত করেছে। লালনের প্রতিবাদ ছিল বর্ণপ্রথা, জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা আর শাস্ত্রীয় শাসন-নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে।
লালন ফকির শুধুমাত্র একজন বাউল ছিলেন না-একজন বাউলের চেয়ে অধিক কিছু ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মতাশালী কবি। তাঁর কাব্যবোধ ছিল অত্যন্ত সূ²। তাঁর এই অনন্য-সাধারণত্ব অর্জন হয়েছিল মানুষের সাধনায়। ধর্ম বা জাতিগত ব্যাপারে শুধু নয়, নর-নারীর সম্পর্কেও তাঁর উদার মনোভাব দৃষ্টিগ্রাহ্য:
“মিঞা ভাই কী কথা শুনাইলেন ভারী
হবে নাকি কেয়ামতে আযাব ভারী
নর-নারী ভে¯Í মাঝার
পাবে কি সমান অধিকার
নরে পাবে হুরের বাদলা
বদলা কি তার পাবে নারী।”
এখানেই লালন চন্ডীদাসের চেয়েও মানবতাবাদী হয়ে উঠেন। বলা যায় তাঁর মানবতা বোধ অনেক বেশি বিশিষ্ট এবং কংক্রীট। এমনকি লালন ফকির নারী অধিকার নিয়ে ধর্মগ্রন্থকেও চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস দেখান। মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধই তাঁকে এ সাহস যুগিয়েছে। মানুষের মধ্যে জাতিভেদ করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। লালন বলেন:
“লালন কয় জাতির বিচার গিয়াছি ভুলে।”
এমনকি জাতি বিভাজনের চিন্তাও তিনি করেননি-
“লালন কয়, জাতির কি রূপ দেখলাম না নজরে।”
লালন শাহ্ একাধারে সাধক, গীতিকার, সুরকার। তাঁর সাধনা ছিল সমন্বয়ের সাধনা। সমন্বয়ের মধ্যে সিদ্ধি অর্জনে তিনি বিশ্বাস করতেন। সীমাবদ্ধ সাম্প্রদায়িক ধর্মের লালন মুক্তির পথ খুঁজেছেন।
“রাম কি রহিম
মাটি কি পবন জল হুতাশন
শুধাইলে তার অন্বেষণ
মুখ দেখে কেই বলেন।”
প্রকৃত অর্থেই লালনের গানে যেভাবে মানব মহিমা ও ধর্ম সমন্বয়ের ব্যাপারে কীর্তির তা যুগদুর্লভ অনন্য উদাহরণ। তিনি বলেন:
“অনন্তরূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই
শুনি মানবের উত্তম কিছু নাই।”
শ্রেণী বর্ণ ছুৎমার্গ অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি সামাজিক ও মানবিক সমস্যার উৎস। এ সম্পর্কে লালন বলেন:
“ধর্ম প্রভূ জগন্নাথ
চায়নারে সে জাত অজাত
ভক্তির অধীন সে।”
লালন শাহ এক উদার অভিনব শাস্ত্রবিহীন মানব ধর্মের প্রতিপোষক। লালন তাই জাত ধর্মের অচলায়তনের দূর্গে তীব্র আঘাত হানেন:
“জাত না গেলে পাইনে হরি
কি ছার জাতের গৌরব করি
ছুঁসনে বলিয়ে।
লালন কয় জাত হাতে পেলে
পুড়াতাম আগুন দিয়ে।’’
লালন শাহ স¤প্রদায় পরিচয়ের উৎসে আঘাত হানেন। জাতবিচারী দূরাচারীকে ধিক্কার দিয়ে ঘোষণা করেন:
“লালন সে জাতের ফাতা,
বিকিয়েছে সাত বাজারে।”
মানব জন্মের গৌরব ও গুরুত্ব লালনের গানে অনবদ্যভাবে ধরা পড়ে। ‘মানষ তত্ত¡ ভজনের সার।’ শাস্ত্র শাসিত সমাজে লালন বলেন:
‘পড়গে নামাজ জেনে শুনে
নিয়েত বাঁধগে মানুষ মক্কাপানে।
তখন এই বাণীর মানবিকরূপ ধরা পড়ে। তিনি বলেন:
“এমন মানব জনম কি আর হবে
মন যা করো ত্বরায় করো এই ভবে।”
ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কিত লালনের কয়েকটি গান এখানে উদ্ধৃত করবো: যা থেকে তাঁর ধর্ম বিশ্বাসে উদারতা প্রকাশ পায়:
১. রাসুল চিনলে খোদা চেনা যায়।
২. যেই মুর্শিদ সেই তো রাসুল, তাহাতে নাই কোন ভুল।
৩. রাধার তুলনা প্রেম যদি কেউ সামান্য করে
মরে বা না মরে সে তো অবশ্য যায় ছারেখারে।
লালন শাহ স্রষ্টা ও সৃষ্টি, আত্মা ও পরমাত্মাকে একই সূত্রে গাঁথেন বলেই প্রেমময় সত্তাকে মনের মানুষ, সখের মানুষ, মানুষ রতন ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করেন-
“এই মানুষে আছে রে মন
যারে বলে মানুষ রতন।”
সমকালীন মানুষ যখন তাঁর জাত নিয়ে দোলাচলে দোলায়মান তখন লালন বলেন:
“সব লোকে কয় লালন ফকির হিন্দু কি যবন
লালন বলে আমার আম না জানি সন্ধান।”
বস্তুত লালন শাহ এককভাবে না সাধক, না তাত্তি¡ক, না বাউল। তিনি ধর্ম প্রচারক নন, সংস্কারকও নন। শুধু তিনি বাংলা লোকজীবনে বিভিন্ন ধর্ম সমন্বয়ের প্রয়াস পেয়েছিলেন। তবে তিনি এও বলেছেন-
“ধর্মা ধর্ম বলিতে কিছু নাই তাতে
প্রেমের গুন গায়।”
সর্বোপরি লালন শাহ বিশ্বাস করতেন:
‘সকল মানবের অভেদাত্মা।
গল্প
কাউম ও হাসু সম্পর্কিত জটিলতা
আলাউল হোসেন
ভোরের আলো আঙিনায় আসার সাথে সাথে অনেকেরই মনে নতুন কোন প্রাপ্তির প্রত্যাশায় পূলক লাগে। গতকাল কিংবা গতরাতের মধুর কোন স্মৃাত নতুন দিনের শুরুতে আর একবার কারো মনে পড়লে পুলকের রেশটুকু ধরে শুধু শুরু হয় নতুন দিনের যাত্রা। এরকম পুলক ওর মনেও লাগে প্রতিদিন সকালে। ওর নাম কাউম। ওর পুরো নাম কাউম কি কাইয়ুম তা আজ বোঝার উপায় নেই। কেননা ও সকলের কাছে কাউম নামেই পরিচিত। কেউ কেউ অবশ্য কাউয়্যাম বলেও ডাকে। যা হোক বিকৃত অর্থের নামের মত ওর জীবনটাও বিকৃত। কতই বা বয়স হবে? ত্রিশ বছর? খুব বেশি হলেও পঁয়ত্রিশ বছর।
কাশীনাথপুর যাত্রী ছাউনীর বারান্দায় শুয়ে আছে কাউম। প্রতি রাতেই কাউমের প্রতীা আগামীকাল নিশ্চয়ই কিছু ভালো খাবার ডাস্টবিনে আসবে। যেমন গতকাল খুঁজতে খুঁজতে ভাই ভাই হোটেলের পাশের আবর্জনার মধ্যে আ¯Í একটা ভাল ডিম পেয়ে গিয়েছিল। ডিমের খোসা ঘাটতে ঘাটতে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের মতই ডিমটা পেয়েছিল। তাছাড়া গতকাল ও ভাল একটাপরাটার অর্ধেকও পেয়েছিল। তবু ডিম পাওয়াটাই ওর কাছে বেশি খুশির ছিল। আর একটু পরে গেলে হয়তো হাসু পাগলীর পেটেই যেত ডিমটা। অবশ্য হাসু পাগলীকে দেখে ওর কেমন যেন মায়াও লাগে। ডিমটা হাতে নিয়ে ভাল করে ওর তেল চিটচিটে গন্ধযুক্ত ছেঁড়া লুঙ্গিতে মুছে নেয়। তারপর চারিদিকে তাকিয়ে দেখে বেশ কয়েকটা পাগলের মাঝে দাঁড়িয়ে হাসু পাগলীও হোটেলের দিকে চেয়ে আছে। কাউমের দয়ার শরীর। একটা আ¯Í ডিম পেয়েছে। ও তাই পরাটার টুকরোটুকু হাসুকে দিয়ে দেয়।
তখনও সূর্য ওঠেনি। রা¯Íা দিয়ে দুইএকজন লোক হেঁটে যাচ্ছে। ওদের কারো কারো মাথায় টুপি। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে হয়তো ঘরে ফিরছে। কাউম আর দেরি করে না। দ্রুত উঠে পড়ে। ওকে নিখিল হোটেলের পিছনে যেতে হবে। এতণে বাসী খাবারগুলো হয়তো ফেলে দিয়েছে হোলে মালিক। কাউম নিখিলের দিকে পা বাড়ায়। গিয়ে অনেক কিছু পেয়ে যায়। বড় একটা কাগজে পরাটার টুকরো, কমলার আধ খাওয়া কোয়া, পাউরুটীর খণ্ড টুকরো ইত্যাদি বয়ে এনে কাশীনাথপুর ব্রীজের পাশে বসে খেয়ে নেয়। আজ ওর ভাগ্য ভালো। অনেকগুলো খাবার পেয়েছে। গতকাল পরাটার টুকরোটুকু হাসু পাগলেিক দিয়ে ওর কাছে খাবার কিছুই ছিল না। ছিল শুধু সেই ডিমটা। ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছিল, তাইতো দোকানপাট খোলা হলে সেই ডিমটা বিক্রির জন্য একটি মুদির দোকানে দেখিয়েছিল। দোকানী ডিমটা দেখে শুনে চোরাই ডিম বলে ওর হাত থেকে কেড়ে নিতে গেলে ও দৌড়ে পালিয়ে এসেছিল। পরে একটা বুড়ো ডিম ক্রেতার কাছে এক টাকা বিক্রি করেছিল। টাকাটা জমানোর ইচ্ছে থাকলেও ুধার তাড়নায় ও একটা রুটি কিনে খেয়েছে।
প্রতিরাতের মত আজও কাউম যাত্রী ছাউনীর বারান্দায় শুয়ে আছে। সন্ধ্যেবেলা অবশ্য তেমন খিদে ছিল না ওর। কিন্তু এই মাঝরাতে কেমন যেন খিদে খিদে লাগছে। অবশ্য খিদে পাওয়া ওর কাছে নতুন কোন ব্যাপার না। বারান্দার ওপাশে বায়লাবুড়ি শুয়ে থাকে। মাঝে মাঝে বুড়িটা কাউমকে এটা ওটা খেতেও দেয়। বায়লার রোজগার ভালোই। ভিে করে। খাবারও পায়। খিদের প্রচণ্ডতায় কাউম বায়লাবুড়ির কাছে যায়। বুড়ি কাউমের মনোভাব বুঝতে পারে। খিদে লাগলেই ও বুড়ির কাছে হাত পাতে। মাঝে মাঝে যে বুড়ির এটা ওটা হাতিয়ে নেয় না, তাও নয়। বুড়ি আজ কাউমের উপস্থিতিতে রু² হয়ে ওঠে। কাশতে কাশতে কর্কশ কণ্ঠে বলতে থাকে- বুড়্যালব্দা, আমার কাছে কী? হাসু পাগলীর কাছে যা। এট্টা ভালো খাওয়ারতা পালি তো হাসুরে দিস। এহুন আমার কাছে কী? হে তোরে দ্যাহে না? আমি তোর কিডা? আমার কাছে আইচিস ক্যা? গালাগালী করলেও বুড়ির দয়ার শরীর। বালিশ হিসেবে ব্যবহৃত ছেঁড়া থলেটার ভিতর থেকে একটা আটার রুটি কাউমকে দেয়। কাউম খেতে খেতে ভাবে কাল যদি কোথাও ভাল খাবার পাওয়া যায়, তাহলে বুড়িকে এনে দেবে। অবশ্য এর আগেও কাউম এ অবস্থায় এ রকম ভেবেছে, কিন্তু বুড়িকে আজও কিছু দেওয়া হয়ে উঠেনি। আসলে উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনাহীন জীবনের সকল বৈশিষ্ট্য কাউমের মধ্যে বিদ্যমান। আজকের পরিকল্পনা মূহুর্তের ব্যবধানে তার কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ে। সেজন্য আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাউকে কিছু দেয়া কাউমের পে সম্ভব হয় না।
সেদিনও হাসুর সঙ্গে দেখা করার কোন পরিকল্পনা কাউমের ছিল না। প্রাত্যাহিক কাজের অংশ হিসেবে সে নিখিল হোটেলের পিছনে আবর্জনা ঘাটতে গিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল পাউরুটি, মিষ্টি বা ডিমের কোন অংশ যদি খাদ্য হিসেবে পাওয়া যায়।
দুই.
সূর্য তখনও উঠেনি। তবে আলো ছায়ার একটা লুকোচুরি খেলা যেন পূর্ব দিগন্ত থেকে শুরু হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। কাউমের কাছে এই সময়টার মূল্য খুব বেশী। কারণ কুকুর বা কাকের উপদ্রব এখনও শুরু হয়নি। প্রায় প্রতিদ্ব›িদ্বতাহীন বিচরণ এখন তার। হাসু বা বায়লারা এলেও কাউম তাদের খুব বেশী মূল্য দেয় না। কাউকে সে প্রতিদ্বন্বিও মনে করে না। দিনের এই সময়টাতে আবর্জনার স্তুপে সেই সম্রাট। তাহলে কে তার সম্রাজ্ঞী? কাউম নিজের অজান্তে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। হাসি তো নয় যেন হায়েনার চিৎকার। ভয়ার্ত কেউ তার পাশে নড়ে চড়ে উঠে। বাম পাশে চোখ ফেরায় কাউম। দুটো মানুষের ছায়া স্পষ্ট দেখতে পায় সে। তাদের একজন আরেকজনকে নিজের বুকের একেবারে গভীরে টেনে নিতে চাইছে। কিন্তু দ্বিতীয় জনের এ কাজে যেন ভীষণ আপত্তি। ফলে, ব্যবধান বাড়ছে দুজনের মধ্যে। কাউম চোখ দুটো বড় করে তাকায়। মানুষ দুটোর একজন যেন দৌড়ে তারই কাছে আসছে। লুঙ্গিতে চোখ দুটো পরিস্কার করে সে। সত্যিই একজন দ্রুত এগিয়ে আসছে তার দিকে। কাউম আরো ভাল করে তাকায়। এবার সে স্পষ্ট বুঝতে পারে তার কাছে এগিয়ে আসা মানুষ একটি মেয়ে। আর পিছনে যে তাকে ধাওয়া করছে সে অবশ্য পুরুষ। কাউম ভেবে অবাক হয় সেও তাহলে কোন মেয়ের একটা আশ্রয় হতে পারে। ইতোমধ্যে মেয়েটা তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছে। কাউম কী করবে ভেবে পায় না। মুহুর্তের মধ্যে মেয়েটা তাকে জড়িয়ে ধরে। এই প্রথম সে কোন নারীর স্পর্শ পেল। গোটা শরীরে যেন তার বিদ্যুৎ খেলে যায়। এই প্রথম সে টের পেল পুরুষের জীবনে মেয়েদের আলাদা একটা প্রয়োজন আছে। সেও মেয়েটাকে বুকের গভীরে টেনে নেয়। তারপর মুখটা চোখের সামনে তুলে ধরে দেখে মেয়েটা হাসু পাগলী। কাউম অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করে- হাসু তুই? হাসু কোন উত্তর দিতে পারে না। পিছনে ফিরে সে আঙ্গুল নির্দেশ করে দেখায়- একজন দ্রুত এগিয়ে আসছে। সে হাসুকে পেতে চায়। কিন্তু তাকে হাসুর খুব অপছন্দ। সে তাই দৌড়ে এসেছে কাউমের কাছে নিরাপদ একটা আশ্রয় যদি পাওয়া যায়। কাউম পেছন ফিরে তাকায়। কাশীনাথপুরের স্থানীয় জোয়ান পাগল জাফরকে দেখতে পায়। জাফর খুব নিকটে পৌঁছে গেছে। কাউম কি তার ছোবল থেকে হাসুকে রা করতে পারবে? মুুহুর্তে সে কী যেন ভাবে। তারপর হাসুকে টানতে টানতে সে রা¯Íার দিকে দৌড়ায়। হাসুও পা বাড়ায় কাউমের সঙ্গে। কে জানে পৃথিবীর আদিম মানব মানবীর পথ চলা ঠিক এভাবে শুরু হয়েছিল কিনা। তবে সেইদিন থেকে কাউম আর হাসু পাগলীকে আর কাশীনাথপুরের কোথাও দেখা যায়নি কোনদিন \